ঢাকা ০৬:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিক্ষোভের জেরে কোটি কোটি ডলার ক্ষতির মুখে কানাডা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪৮:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১১৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রায় এক মাস ধরে উত্তপ্ত কানাডা। টিকা নেওয়া আবশ্যিক ঘোষণা করা হয়েছে দেশটিতে। তাতে ক্ষুব্ধ দেশবাসীর একাংশ। তারা টিকা নিতে চান না। টিকা না-নেওয়া থাকায় অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। তারই প্রতিবাদে পথে নেমেছেন তারা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, সরকারের জারি করা এই নিয়ম প্রত্যাহার করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে চলা বিক্ষোভের জেরে ও বিভিন্ন হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যেই কোটি কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে কানাডার।

দেশের কিছু অংশে বিক্ষোভ হিংসার চেহারা নিতেও শুরু করেছে। ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের পশ্চিমে একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণস্থলে ভয়ানক সংঘর্ষ বাধে সম্প্রতি। তার তদন্ত করছে পুলিশ। রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে কমপক্ষে ২০ জন লোক হাতে কুড়ুল নিয়ে ‘কোস্টার গ্যাসলিঙ্ক’ কনস্ট্রাকশন সাইটের নিরাপত্তারক্ষীদের উপরে হামলা চালায়। সংস্থার গাড়ির জানলার কাচ ভেঙে দেয় তারা। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। তারা দেখে, গাছ কেটে রাস্তায় ফেলা। রাস্তা বন্ধ করতে আলকাতরা মাখানো তার, বোর্ড, পেরেক ছড়ানো ও জায়গায় জায়গায় আগুন লাগানো।

পুলিশি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এ সব সরিয়ে তারা যখন এগোতে যায়, তখন কিছু লোক গ্যাস-বোমা ছোড়ে। অনেকে গাছের ভাঙা ডালে আগুন ধরিয়ে তা ছুড়ে দেয় পুলিশের দিকে। এক পুলিশ কর্তা তাতে আহতও হন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ দেখে, লাখ লাখ ডলারের ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়ে ফেলেছে বিক্ষোভকারীরা। নির্মাণস্থলের প্রচুর যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করা হয়েছে। সংস্থার পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, রীতিমতো ষড়যন্ত্র করে হামলা চালানো হয়েছে। প্রাণ সংশয় ঘটানো হয়েছে সংস্থার কর্মীদের।

এরপরই বিক্ষোভ থামাতে রণমূর্তি ধারণ করেছে কানাডার পুলিশ। তাদেরকে দেখা গিয়েছে আন্দোলনকারীদের ধাক্কা দিতে দিতে এলাকা থেকে সরিয়ে দিতে। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে ১৭০ জন প্রতিবাদীকে। সেই সঙ্গে দাঁড় করিয়ে রাখা ট্রাকগুলিকেও সরানো হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া গিয়েছে, রাজধানী অটোয়ায় পার্লামেন্ট হিলের সামনে রাস্তা ফাঁকা হয়ে গিয়েছে।

সংবাদ সংস্থা এপিকে পুলিশ কর্তা স্টিভ বেল জানিয়েছেন, সারা দেশেই পুলিশ তৎপর রয়েছে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিয়ে রাস্তা ফাঁকা করার কাজে। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তার দাবি, ‘বেআইনি’ আন্দোলন শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে এখনও কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ চললেও শিগগিরি পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে চলেছে বলেই দাবি তাঁর।

গত জানুয়ারি মাস থেকেই করোনার টিকাকরণ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত ঘিরে উত্তাল কানাডা। বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলনরত হাজার হাজার ট্রাকচালক। সীমান্তে দিয়ে চলাচল করা ট্রাকগুলির চালকদেরও টিকাকরণে বাধ্য করছে কানাডা সরকার, এমন অভিযোগে বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করে। রাজধানী অটোয়ায় পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার পরিবারের সদস্যদের কোনও ‘গোপন’ আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে কয়েকদিন আগেই প্রতিবাদীদের থামাতে জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন ট্রুডো। ওই বিক্ষোভকে বেআইনি বলে নিয়মিত দাবি করে আসছিলেন কানাডার একাধিক মন্ত্রী। এবং সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছিলেন তারা। অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে সরিয়ে দেওয়া হল আন্দোলনকারীদের।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিক্ষোভের জেরে কোটি কোটি ডলার ক্ষতির মুখে কানাডা

আপডেট টাইম : ০৬:৪৮:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রায় এক মাস ধরে উত্তপ্ত কানাডা। টিকা নেওয়া আবশ্যিক ঘোষণা করা হয়েছে দেশটিতে। তাতে ক্ষুব্ধ দেশবাসীর একাংশ। তারা টিকা নিতে চান না। টিকা না-নেওয়া থাকায় অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। তারই প্রতিবাদে পথে নেমেছেন তারা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, সরকারের জারি করা এই নিয়ম প্রত্যাহার করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে চলা বিক্ষোভের জেরে ও বিভিন্ন হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যেই কোটি কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে কানাডার।

দেশের কিছু অংশে বিক্ষোভ হিংসার চেহারা নিতেও শুরু করেছে। ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের পশ্চিমে একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণস্থলে ভয়ানক সংঘর্ষ বাধে সম্প্রতি। তার তদন্ত করছে পুলিশ। রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে কমপক্ষে ২০ জন লোক হাতে কুড়ুল নিয়ে ‘কোস্টার গ্যাসলিঙ্ক’ কনস্ট্রাকশন সাইটের নিরাপত্তারক্ষীদের উপরে হামলা চালায়। সংস্থার গাড়ির জানলার কাচ ভেঙে দেয় তারা। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। তারা দেখে, গাছ কেটে রাস্তায় ফেলা। রাস্তা বন্ধ করতে আলকাতরা মাখানো তার, বোর্ড, পেরেক ছড়ানো ও জায়গায় জায়গায় আগুন লাগানো।

পুলিশি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এ সব সরিয়ে তারা যখন এগোতে যায়, তখন কিছু লোক গ্যাস-বোমা ছোড়ে। অনেকে গাছের ভাঙা ডালে আগুন ধরিয়ে তা ছুড়ে দেয় পুলিশের দিকে। এক পুলিশ কর্তা তাতে আহতও হন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ দেখে, লাখ লাখ ডলারের ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়ে ফেলেছে বিক্ষোভকারীরা। নির্মাণস্থলের প্রচুর যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করা হয়েছে। সংস্থার পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, রীতিমতো ষড়যন্ত্র করে হামলা চালানো হয়েছে। প্রাণ সংশয় ঘটানো হয়েছে সংস্থার কর্মীদের।

এরপরই বিক্ষোভ থামাতে রণমূর্তি ধারণ করেছে কানাডার পুলিশ। তাদেরকে দেখা গিয়েছে আন্দোলনকারীদের ধাক্কা দিতে দিতে এলাকা থেকে সরিয়ে দিতে। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে ১৭০ জন প্রতিবাদীকে। সেই সঙ্গে দাঁড় করিয়ে রাখা ট্রাকগুলিকেও সরানো হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া গিয়েছে, রাজধানী অটোয়ায় পার্লামেন্ট হিলের সামনে রাস্তা ফাঁকা হয়ে গিয়েছে।

সংবাদ সংস্থা এপিকে পুলিশ কর্তা স্টিভ বেল জানিয়েছেন, সারা দেশেই পুলিশ তৎপর রয়েছে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিয়ে রাস্তা ফাঁকা করার কাজে। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তার দাবি, ‘বেআইনি’ আন্দোলন শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে এখনও কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ চললেও শিগগিরি পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে চলেছে বলেই দাবি তাঁর।

গত জানুয়ারি মাস থেকেই করোনার টিকাকরণ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত ঘিরে উত্তাল কানাডা। বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলনরত হাজার হাজার ট্রাকচালক। সীমান্তে দিয়ে চলাচল করা ট্রাকগুলির চালকদেরও টিকাকরণে বাধ্য করছে কানাডা সরকার, এমন অভিযোগে বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করে। রাজধানী অটোয়ায় পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার পরিবারের সদস্যদের কোনও ‘গোপন’ আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে কয়েকদিন আগেই প্রতিবাদীদের থামাতে জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন ট্রুডো। ওই বিক্ষোভকে বেআইনি বলে নিয়মিত দাবি করে আসছিলেন কানাডার একাধিক মন্ত্রী। এবং সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছিলেন তারা। অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে সরিয়ে দেওয়া হল আন্দোলনকারীদের।